সময় এতো দ্রুত পার হয়ে যায় যে, মাঝে মাঝেই খেই হারিয়ে ফেলতে হয়।
অনিচ্ছা সত্ত্বেও মেনে নিতে হয় সময়ের গতিকে। এই সেদিন মাত্র দুই বেণী ঝুলিয়ে যে মেয়েটি স্কুলে ছুটেছে, তাকেই আজ নিজের মেয়েকে নিয়ে যেতে স্কুলে! কিছু বুঝে ওঠার আগেই বয়স বিশ ও তিরিশের কোঠা পেরিয়ে চল্লিশের ঘরে চলে আসে। চল্লিশ বছর! একেবারেই কম নয় কিন্তু! তারুণ্য ও যৌবনকে যেন এই বয়সটা অনেকখানি পেছনে ফেলে দেয়। ঠিক এই কারণেই চল্লিশ বছর বয়সে জীবনে, মনোভাবে এমনকি চেহারাতেও বড়সড় পরিবর্তন দেখা দেয়।
সামনেই কি আপনার বয়স চল্লিশ বছর হবে? তাহলে চোখ বুলিয়ে নিন আজকের ফিচারটিতে। যেখানে আলোচনায় রাখা হয়েছে চল্লিশ বছর বয়সে যে পরিবর্তনগুলো দেখা দিয়ে থাকে।


⦿ ওজন কমবে না সহজে
একটা বয়স পর্যন্ত নিত্যদিনের রুটিনে কিছুটা পরিবর্তন আনলেই ঝটপট ওজন কমিয়ে ফেলা সম্ভব হতো। কিন্তু বয়স যখনই চল্লিশের ঘর ছুঁয়ে দিবে, ওজনকে কোনভাবে কমানো সম্ভব হবে না। এক সপ্তাহ টানা ৫০০ ক্যালোরি ডায়েট চার্ট মেনে চললেও এক কেজি ওজন কমতে চাইবে না। কিন্তু এক চামচ বাড়তি খাবার খেলেও ওজন বেড়ে যাবে অবিশ্বাস্যভাবে। এমনটা হওয়ার কারণ হলো, বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে শরীরের মেটাবোলিজমের মাত্রা কমতে থাকে। বয়স চল্লিশে পোঁছালে মেটাবলিজমে হার লক্ষণীয়ভাবে হ্রাস পায় বলেই ওজন নিয়ে বিড়ম্বনা দেখা দেয়।

⦿ নিজেকে ভালোভাবে বুঝতে পারা
প্রতিটা মানুষই জীবনের বেশ অনেকখানি সময় পার করেন নিজের বিষয়ে প্রশ্ন রেখে। ‘কে আমি’, ‘কী হতে চাই আমি’, ‘কী এই জীবনের লক্ষ্য’, ‘কোন কাজে আগ্রহ আছে’, ‘কী করতে ভালোবাসি’ এমনতর হাজারো প্রশ্নের মাঝে খেই হারিয়ে ফেলতে হয়।
কিন্তু জীবনের চল্লিশটি বছর পার করে ফেলার মাঝে এই বিষয়টি অনেকটাই আয়ত্ত্বে চলে আসে। এতোদিনে কোন কাজটি পছন্দ, সেটা জানা হয়ে যায়। নিজের মূল্যবোধ সম্পর্কে জানা হয়। নিজের কাজের গুরুত্ব সম্পর্কে বোঝা যায়। যে বিষয়ে দ্বিধাদন্দ কাজ করতো, সে বিষয়ে পরিস্কার ধারণা চলে আসে।

⦿ কোন কিছু মনে রাখা দারুণ চ্যালেঞ্জিং
স্কুল, কলেজ কিংবা ভার্সিটিতে পড়ার সময় যেখানে কোন একটি কথা শুনলেই মনে থাকতো, সেখানে এখন একই কথা বারংবার বলা হলেও মনে রাখা কষ্টকর হয়ে দাঁড়াবে। চল্লিশ বছর বয়সে মস্তিষ্ক অনেকটাই যেন অচেনা হয়ে যায়। প্রখর স্মৃতিশক্তিও হুট করে নেই হয়ে যায়। সন্তানের স্কুলের পড়া দেখিয়ে দেওয়ার সময়ে দেখা যায়, পারা অংকর সূত্রটাও যেন আর মনে আসছে না।

⦿ কোনো বিষয়ে বিচলিত না হওয়া
সত্যি বলতে, এই বয়সে আশেপাশের কথায়, অন্যের মতামতকে গুরুত্ব দেওয়ার প্রবণতা একেবারেই কমে যাবে। বয়স যখন কম ছিল, তখন এই আপনিই অন্যের মতামতকে নিজের মতামতের চাইতেও বেশি প্রাধান্য দিতেন। অথচ এখন যেন গায়েই মাখেন না একদম। এছাড়া যেকোন বিষয়ে, ঘটনায় ঝামেলা এড়িয়ে যাওয়ার প্রবণতা প্রবলভাবে দেখা দিবে। সবাইকে সবার মতো থাকতে দিয়ে নিজেকে নিজের মতো করে সময় দেওয়ার প্রতিই থাকবে মূল লক্ষ্য।

⦿চেহারার পরিবর্তনটা চোখে পড়বে খুব বেশি
বয়স বিশের কোঠা পেরুলেই চেহারায় পরিবর্তন আসতে শুরু করে। তবে এই পরিবর্তনটা সবচেয়ে বেশি দেখা দেবে বয়স যখন চল্লিশে পড়বে। হুট করেই চোখের পাশে, ঠোঁটের পাশে ভাঁজ দেখা দেবে। ত্বকের মেলানিন যেন আর কাজই করছে না- এমনটা মনে হবে। এতে মন খারাপের কিচ্ছু নেই। প্রতিটা বয়সের আলাদা সৌন্দর্য আছে। সেটাকে বুঝতে হবে ও মেনে নিতে হবে।

⦿ কোনটি গুরুত্বপূর্ণ- সেটা বুঝতে পারা
নিজের গণ্ডি, আপন জগত, পরিবারের মানুষ, প্রিয় মানুষ, সন্তান, ক্যারিয়ার, সংসার- এগুলোই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব বহন করে আপনার জীবনে। মিথ্যে আশ্বাস, সম্পর্ক, বন্ধুত্ব ও নানা রকম ভনিতা এ বয়সের মাঝেই অনেকখানি দেখা হয়ে যায়। ফলে খুব সাধারণ ও সহজভাবেই জীবনে কে কতটা গুরুত্বপূর্ণ, কোন জিনিসটি কতটা গুরুত্ব বহন করে সেটা অনুধাবন করা সম্ভব হয়। এখানে এসে বলতেই হয়, চল্লিশ বছর বয়স হিসেবে অতোটাও খারাপ নয়!


গবেষগবেষনায় দেখা গেছে, ৩০ বছর বয়স থেকে খাবার বার্ন করার শক্তি প্রতি ১০ বছরে ৭ শতাংশ হারে কমতে থাকে, তাই ২০ বছর বয়সে যা খেয়েছেন তাই যদি ৪০ বছর বয়সে এসেও খান, আগের মতো খাবার বার্ন না হওয়াতে আপনার ওজন অবশ্যম্ভাবী ভাবে বাড়তে শুরু করবে, যার ফলশ্রুতিতে কার্ডিওভাসক্যুলার ডিজেজ, ডায়াবেটিস এর ঝুকি বাড়াবে।

ভালো খবর হলো, কিছু খাবার আপনার অনাকাংখিত কোলেষ্টরেল লেভেল নিয়ন্ত্রনে রাখতে সহায়তা করবে, আপনার এনার্জীও বাড়াবে। চলুন জেনে নেই তেমন কিছু খাবারের কথা-

ওটস

ওটসে থাকা ফাইবার, বেটা গ্লুকেন, অ্যান্টি অক্সিডিন্ট আপনার ভালো কোলেষ্টরেল (এইচডিএল) এর পরিমান বাড়াবে যা খারাপ কোলেষ্টরেল কে নিয়ন্ত্রনে রাখতে সহায়তা করবে।
কিভাবে খাবেন: পরিজ তৈরি করে অথবা টকদই এর সাথে মিশিয়ে খান।
চেরী


চেরী আমাদের দেশেও পাওয়া যায় এখন, এর মধ্যে থাকা অ্যান্টি অক্সিডেন্ট গাউট এবং আর্থারাইটিসের জন্যে বেশ কার্যকর।
কিভাবে খাবেন: ১ ডজন চেরী খান অথবা বাড়তি কোন সুগার না দিয়ে চেরীর জ্যুস খান সপ্তাহে ৩/৪ বার। এছাড়া টকদই এর সাথেও মিশিয়ে খেতে পারেন।
আমন্ড


গবেষনায় দেখা গেছে ২০ জন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষকে প্রতিদিন ৬০ গ্রাম করে ৪ সপ্তাহ আমন্ড বাদাম খাওয়ানোর পর তাদের ব্লাড সুগার ৯ শতাংশ কমে গেছে। তাই বলা হচ্ছে, আমন্ড বাদাম কার্ডিও ভাসক্যুলার ডিজিজ এবং ডায়াবেটিস প্রতিরোধে সহায়তা করতে পারে।
কিভাবে খাবেন: শুধু আমন্ড বাদাম খান, তবে লবন নেবেন না কারন লবন আপনার ব্লাড প্রেশার বাড়িয়ে দিতে পারে।
তেল সমৃদ্ধ মাছ


ওমেগা-৩ ফ্যাট সমৃদ্ধ মাছ হার্ট বিট রেট কমায়, ব্লাড প্রেশার কমায় এবং অনিয়মিত হার্টবিট এর ঝুঁকি নিয়ন্ত্রনে আনে।ওমেগা-৩ সমৃদ্ধ খাবার গুলো হলো স্যামস, টুনা, সার্ডিন এবং হেরিং মাছ। এক গবেষণায় দেখা গেছে যে সকল নারীরা ওমেগা ৩ সমৃদ্ধ মাছ বেশী খান তারা স্ট্রোক এর ঝুঁকি কমাতে পারেন।
কিভাবে খাবেন- ওমেগা-৩ সমৃদ্ধ খাবার খুব বেশী তাপে রান্না করতে হয় না, এতে এর পুষ্টিগুন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বিদেশে অনেকে কাঁচা মাছ কে সুশি আকারে খান, তবে আমরা যেহেতু কাঁচা খাইনা তা্ই স্বল্প তাপে রান্না করে খেতে হবে। সপ্তাহে ৪ বার ওমেগা-৩ সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে।

সয়াবিন


সয়া বিনে থাকা ইসোফ্লাবোনস রক্তে কোলেষ্টরেল কমায়, নারীদের মনোপজের পরে হাড়ের ঘনত্ব বৃদ্ধি করে এবং পুরুষের ফার্টিলিটি বাড়ায়।
কিভাবে খাবেন- তাজা সয়াবিন খান অথবা বিভিন্ন সুপার স্টোরে ক্যানে পাওয়া যায় সেগুলো নির্দেশনা অনুয়ায়ী প্রস্তুত করে খেতে পারেন।সপ্তাহে সয়া বিন ২-৩ বার খেতে হবে।
টমেটো


টমেটোতে আছে লাইকোপেন অ্যান্টি অক্সিডেন্ট, যা আর্টারি কে আর্থারসেলোসিস থেকে রক্ষা করে এবং ক্যানসার সেলের বৃদ্ধির বিপরীতে সুরক্ষা দেয়।
কিভাবে খাবেন- রান্না করে খাওয়া হলে লাইকোপেন শরীরে সহজে শুষে নিতে পারে, তাই রান্না করে খেলে বেশী ভালো, তাছাড়া টমেটো পিউরি, জ্যুস, সালাদ করেও খেতে পারেন।
ফুল মিল্ক


ফুল ফ্যাট মিল্ক শরীরে বার্ধক্য রোধে বেশ কাজ করে। ফুল মিল্কে প্রতি ১০০ মিলি তে ১১৮ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম থাকে যা হাড়ের স্বাস্থ্য ভালো রাখে। প্রতিদিন পুরুষের জন্যে ১০০০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম এবং নারীদের জন্য ১২০০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়ামের চাহিদা থাকে। প্রতিদিন সবুজ শাক-সবজি, বাদাম এর পাশাপাশি ফুল মিল্ক খেতে পারলে কার্যকর ভাবেই শরীরের ক্যালসিয়ামের চাহিদা পূরন করা যায়।
কিভাবে খাবেন- নিয়মিত রাতে এক গ্লাস দুধ খেতে পারেন। তবে অনেকে ক্যালসিয়ামের চাহিদা পূরন করার জন্য ক্যালসিয়াম সাপ্লিমেন্ট গ্রহন করেন, কিন্তু মনে রাখতে হবে অনেক বেশী ক্যালসিয়াম গ্রহন করলে পুরুষদের প্রোষ্টেট ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ে।
মুরগী


মুরগী প্রোটিনের ভালো উৎস। যদি মুরগী মাংস হিসেবে খেতে ভালো না লাগে, চিকেন স্যুপ করেও খেতে পারেন।

barta24.com & rongpata.com অবলম্বনে

Post a Comment

Previous Post Next Post