⦿ সার্ভিস বা সমাধান সেলসের সাথে ব্যাস্তানুপাতিক। সমস্যা যত কমবে সেলস তত বাড়বে। প্রতিনিয়ত সমস্যা নিয়ে কাজ করতে হবে। সমস্যা জিরোতে নেয়ার চেষ্টা করতে হবে। অভার প্রমিজ করে সমস্যা তৈরি করা যাবেনা। সমস্যাযুক্ত লোক প্রোডাক্টের সাথে থাকলে ওই প্রোডাক্টের ধংস্ব কেউ ঠেকাতে পারবেনা। টীমের মধ্যে থেকে সমস্যাযুক্ত লোক বের করতে হবে। অন্যদিকে যারা ভালো সেই সকল টিম-মেটদের মূল্যায়ন করতে হবে। ফিল্ড থেকে তাদের হয়ে তথ্য আসতে হবে, তাদের হয়ে যেতে হবে। চেইন অফ কমান্ড নস্ট করা যাবেনা। আমি একটা কমন কথা বলি সবসময়, হয় সমস্যা থাকবে না হয় অফিসার থাকবে। দুইটা একসাথে আমি চাইনা। কিছু সময় টীমমেটরা হতাশ হয়ে যায়, বসদের কাজ আসলে তখনই শুরু। তার সব কথা শুনে সমস্যার সমাধান করে দেয়াটাই প্রকৃত বসের কাজ। আমি যখন প্রথম ইএপিতে আসি। ২ মাস পরেই চরম হতাশ হয়ে যাই। পণ্য নাই, মার্কেট নাই, লোক নাই, সেলস নাই। চেয়ারম্যান স্যারকে বলেছিলাম, আমি এগুলো বুঝিনা-আমাকে দিয়ে হবেনা। উনি বলেছিলেন, আমিও বুঝিনা! আমি বানাতে বানাতে আর আপনি বেচতে বেচতে শিখে ফেলবেন। এর পর আসলে আর কিছু ভাবার সুযোগ নাই, ভাবিনি। আমি আবারো খুব হতাশ হয়েছিলাম। আমার বিখ্যাত বস চলে যাওয়ার পর। ১১০ টা পার্টির চেক ছিলনা কিন্তু তাদের নিকট কোম্পানীর বাকী ছিল। ৫৬ কোটি টাকা মার্কেট ক্রেডিটের বিপরীতে ৮ কোটি টাকা মাসিক ব্যাবসা হতো। আমি দ্বায়িত্ব নেয়ার পর মার্কেটে আলোচনা শুরু হয়ে গেল এই চ্যানেল বন্ধ হবে। আমি চেয়ারম্যান স্যারের সরনাপন্ন হলাম। এবারো চেয়ারম্যান স্যার আমাকে সাহস দিলেন। বললেন চেক গুলো এখন নিয়ে আসেন। ডিউ ডিক্রিজ পলিসি করতে বললেন, সেই পলিসিতে বাকী কমাতে বললেন। আমি আবারো আশ্বস্থ হয়েছিলাম এবং ইএপির শুরু থেকে আজকের ইন্ডাস্ট্রির ২য় অবস্থানে আসা পর্যন্ত ইএপির সাথে থাকতে পেরে আমি সত্যিই খুব গর্বিত।
⦿ সাধারন কাজ করে কেউ অসাধারন হতে পারেনি। অলিম্পিকে সবচেয়ে বেশী স্বর্নপদকজয়ী সাতারু মাইকেল ফেলপস সপ্তাহে ৭ দিন প্রাকটিস করতেন। উনাকে জিজ্ঞেস করলে বলেন, সবাই ৬ দিন প্রাকটিস করে আর আমি ৭ দিন। বছরে ৫২ দিন বেশি প্রাকটিস আমাকে অন্যদের চেয়ে আলাদা করবে। আমি সবসময় আমার সমপর্যায়ের সহকর্মীদের চেয়ে কিছু কাজ আলাদা ভাবে বেশি করি। বিশেষ কাজগুলো অফিস টাইমের বাইরে করি। রাতে মিটিং করি, রিপোর্ট করি, এক্সট্রা ইফোর্ট দেই। আমার ধারনা এটাই আমাকে এগিয়ে রাখে। আমাকে আত্নবিশ্বাসী করে। সাকসেস এসে কখনো ধরা দেয়না বরং দম নিয়ে সাকসেসের পিছনে দৌড়াতে হয়। ওয়ালটনের মত এত বৃহত একটা প্রতিষ্ঠান এমনে এমনেই হয়ে গেছে, বিষয়টা এরকম না। এখানে প্রচুর মেধা আর ঘাম আছে। এখনো ডিরেক্টর স্যারদের যে ডেডিকেশন সামনে থেকে দেখি তা বর্ননা করার মত না। আমার উপলব্ধি ভালো কিছু এচিভ করার কোন শর্টকাট রাস্তা নাই। মেধা ও শ্রমের সম্মিলন ছাড়া ভালো কিছু সম্ভব না। জীবনে ভালো কিছু করে সময়ের সাথে সাথে আপনার অবস্থানের পরিবর্তন না করতে পারলে এক সময় আপনার জীবনটা এক ফ্রেমে আর ভালো লাগবেনা। আপনি স্বপ্ন দেখা ভুলে যাবেন, আর হতাশা হাতছানি দিবে।
⦿ প্রত্যেকটা মানুষ তার সামর্থ অনুযায়ী সফল। আমাদের সবার প্রতিদিন কিছু সামর্থ বাড়ানো উচিত। বিল গেটস এখনো যে পরিমান বই পড়েন তা আমরা কল্পনাও করতে পারবনা। উনাকে বইয়ের পোকাও বলে কেউ কেউ। স্টিভ জবস যখন পড়াশুনা ছেড়ে দিয়েছিলেন তখন কিছু কোর্স করেছিলেন। তার মধ্যে ক্যালিওগ্রাফি অন্যতম। পরবর্তীতে ম্যাক-উইন্ডোজ বানানোর সময় সেই কোর্সটাই কাজে লাগিয়ে ফন্ট সাজিয়েছিলেন। সেই ফন্ট-ই পরে উইন্ডোজ হুবহু কপি করে। আজকে আমরা কম্পিউটারে যে সুন্দর লেখা দেখতে পাই সেটা ঐ ক্যালিওগ্রাফি কোর্সের কারনেই। ইলন মাস্ক রকেট নিয়ে পড়াশোনা আগে করেননি বরং রকেট বানানোর কাছাকাছি সময়ে পড়েছেন। পড়ে পড়েই বিশ্বে প্রথম অকল্পনীয় সেই পুনঃ ব্যবহারযোগ্য রকেট বানিয়েছেন। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান প্রশিক্ষণের পেছনে অঢেল অর্থ ব্যয় করলেও দেখা যায় কিছু কর্মীর কাজের গতি ও মানসিকতা প্রায় অপরিবর্তিতই থেকে যায়। এজন্য শেখার আগ্রহটা জরুরী। বই পড়েই শিখতে হবে সেই যুগ এখন আর নেই। অনলাইন কোর্স , ভিডিও, অডিও, সার্চ সহ বিভিন্ন উপায়ে এখন শেখা যায়। শেখার উপকরন এখন মানুষের হাতে হাতে। পড়া বা ট্রেইনিং এর মাধ্যমে অন্তর্দৃষ্টি প্রসারিত হয়। যে অন্তর্দৃষ্টির জন্য বিল গেটস কম্পিউটারের ভবিষ্যৎ দেখতে পান, জামিলুর রেজা চৌধুরী হয়ে ওঠেন অগ্রগণ্য প্রকৌশলী, আতাউল করিম তৈরি করেন ম্যাগলেভ ট্রেন। একজন মানুষ সব বিষয়ে পারদর্শী হবে এটা বেশি বাড়াবাড়ি। আমি শুরু থেকেই বুঝেছিলাম আমার প্রফেশনাল লাইফে আমাকে এক্সেলে পারদর্শী হতে হবে। তাই কাজ করতে গিয়ে এক্সেলের যখন যা প্রয়োজন হয়েছে তাই শিখেছি। কখনো সিনিয়ির, কখনো জুনিয়র, কখনো গুগল আর কখনো ইউটিউব। আমি এক্সেলে মিড লেভেল ক্রস করেছি অনেক আগেই। যেকোন কাজে এই এক্সেলই আমাকে সবার থেকে পার্থক্য গড়ে দেয়। ২০১৯ এ এসে দেখলাম এক্সেলের চেয়ে গুগল শীট আরো কমফোর্টেবল। শিখতে থাকলাম। আজ আমি গুগল শীট, গুগল ডকস, গুগল স্লাইড, গুগল সাইট, গুগল ফর্ম এর এক্সট্রিম লেভেলের ইউজার। আমি আমার কর্মজীবন নিয়ে খুব সচেতন এবং আলাদা সময় বের করা কস্টসাধ্য। তবুও সময় পেলে যে কোর্সগুলো এনরোল করা সেই কোর্সগুলো করার চেস্টা করি।
মোঃ ফারুক হোসেন
Post a Comment